অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত কাঙ্ক্ষিত গুরুত্ব পাচ্ছে না। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-তে এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন প্রস্তাবিত এডিপি অনুসারে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আগের তুলনায় প্রায় ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কমানো হচ্ছে।শিক্ষা খাতে ৩ হাজার কোটি টাকার কাটছাঁটপরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের খসড়া অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। কিন্তু আগামী এডিপিতে তা কমিয়ে ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে, অর্থাৎ ২ হাজার ৯৭১ কোটি টাকার ঘাটতি।স্বাস্থ্য খাতেও বরাদ্দ কমেছে আড়াই হাজার কোটি টাকাচলতি বছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। নতুন এডিপিতে তা কমিয়ে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার হ্রাস।উন্নয়ন বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য অবহেলিতবিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, অর্থনীতির আকারের তুলনায় শিক্ষায় সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেওয়া দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। একইভাবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন বাংলাদেশির জন্য বছরে ৮৮ ডলার স্বাস্থ্যসেবায় খরচ প্রয়োজন, কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে মাথাপিছু খরচ মাত্র ৫৮ ডলার, যার বেশির ভাগ নাগরিকদের ব্যক্তিগত খরচ থেকেই আসে।সানেম-এর উদ্বেগ: কাঠামোগত সংস্কারের সুযোগ হারাল সরকারসাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ড.
সেলিম রায়হান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে মানুষ আশা করেছিল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার এবং বরাদ্দ বৃদ্ধির। কিন্তু বরাদ্দ কমানো হলে তা হতাশাজনক।” তিনি আরও বলেন, রাজস্ব আদায় কম এবং ঋণপ্রবাহের ঘাটতি এ সিদ্ধান্তের পেছনে ভূমিকা রাখছে।টাকা খরচের সক্ষমতার অভাব দেখিয়ে বরাদ্দ হ্রাসপরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, প্রকল্পের টাকা খরচের সক্ষমতা নেই, ফলে যৌক্তিক বরাদ্দের মাধ্যমে কার্যকারিতা নিশ্চিত করার চেষ্টাই করা হয়েছে।এডিপির আকারও কমছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা২০২৫-২৬ অর্থবছরের নতুন এডিপির প্রস্তাবিত মোট আকার হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বছরের ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার চেয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম। আগামীকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে এডিপির চূড়ান্ত অনুমোদন হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করবেন।বিভিন্ন খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দের চিত্রখাত প্রস্তাবিত বরাদ্দ (কোটি টাকা)পরিবহন ও যোগাযোগ ৫৮,৯৭৩বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ৩২,৩৯২শিক্ষা ২৮,৫৫৭স্বাস্থ্য ১৮,১৪৮গৃহায়ণ ২২,৭৭৬স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ১৬,৪৭২কৃষি ১০,৭৯৫পরিবেশ, জলবায়ু ও পানিসম্পদ ১০,৬৪১শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা ৫,০৩৮বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ৩,৮৯৪ নীতিগত অঙ্গীকার বনাম বাস্তবায়নবরাদ্দ কমানোর এ প্রস্তাব নীতিনির্ধারকদের শিক্ষার উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ে প্রতিশ্রুতি প্রশ্নবিদ্ধ করে। যেখানে সংস্থাগুলো বলছে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর, সেখানে মূল খাত দুটিতেই বরাদ্দ কমানো চরম হতাশাজনক।
মন্তব্য (০)