মাত্র কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সাময়িকভাবে শুল্ক বিরতিতে পৌঁছালেও, হুয়াওয়ের এআই চিপ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের নিজস্ব উন্নত সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন, আর এ নিয়েই শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব।চীন সম্প্রতি হুয়াওয়ের তৈরি “Ascend” সিরিজের এআই চিপ ব্যবহার না করার জন্য মার্কিন সতর্কতার তীব্র সমালোচনা করেছে। এমনকি দেশটি অভিযোগ তুলেছে, যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপের মাধ্যমে জেনেভায় অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বাণিজ্য আলোচনায় গৃহীত সমঝোতা চুক্তিকে লঙ্ঘন করছে।চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানি নিয়ন্ত্রণকে অস্ত্র বানিয়ে চীনের প্রযুক্তিগত বিকাশ দমন করার চেষ্টা করছে, যা একধরনের একপক্ষীয় দমননীতি এবং রক্ষণশীলতার পরিচায়ক।”চীনের চরম প্রতিক্রিয়া ও আইনি হুমকিমার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের এক ঘোষণায় বলা হয়, যদি কোনো কোম্পানি হুয়াওয়ের Ascend চিপ ব্যবহার করে, তবে তা মার্কিন রপ্তানি বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করবে। পরে এই ঘোষণার ভাষা কিছুটা পরিবর্তন করা হলেও চীন জানায়, এটি যথেষ্ট নয়। তারা হুঁশিয়ারি দেয় যে, যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যারা এই মার্কিন নির্দেশনা বাস্তবায়নে সহায়তা করবে, তাদের বিরুদ্ধে চীনের “Anti-Foreign Sanctions Law” অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।চীনের স্বনির্ভরতা নীতির অংশ হুয়াওয়েচীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজেই দেশীয় এআই প্রযুক্তি বিকাশে “সম্পূর্ণ স্বনির্ভরতা”র উপর জোর দিয়েছেন। হুয়াওয়ের এই Ascend চিপই সেই লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যা মার্কিন জায়ান্ট Nvidia-র
আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করছে।Nvidia প্রধানের ক্ষোভএদিকে, মার্কিন চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান Nvidia-র সিইও জেনসেন হুয়াং চীনে মার্কিন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “এই বিধিনিষেধের কারণে আমাদের বহু বিলিয়ন ডলারের ইনভেন্টরি বাতিল করতে হয়েছে। চীনা বাজার হারানো আমাদের জন্য বড় ধাক্কা।”চীনে এআই চিপের বাজার আগামী বছরে ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে বলে মন্তব্য করেন হুয়াং। তিনি বলেন, “আমেরিকার প্রযুক্তিকে যদি এই বাজার থেকে বঞ্চিত করা হয়, তবে তা দেশের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষতি। তাই আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এই সুযোগ কাজে লাগানো।”মধ্যপ্রাচ্যে বড় চুক্তিতে Nvidiaবাণিজ্য বাধা অতিক্রম করে, Nvidia সম্প্রতি সৌদি আরবে একটি বড় প্রকল্প ঘোষণা করেছে, যেখানে তারা Humain নামের একটি স্টার্টআপের সঙ্গে অংশীদারিত্বে “AI কারখানা” নির্মাণ করবে। এই প্রকল্পে ৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদনক্ষমতা থাকবে। এতে ব্যবহারের জন্য ১৮ হাজার GB300 Grace Blackwell চিপ সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে।বিশ্লেষকরা বলছেন, এই চুক্তি সম্ভব হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগে বিডেন আমলের নিষেধাজ্ঞাগুলো বাতিল করায়।সামনের দিনগুলো অনিশ্চিতযদিও নতুন কোনো চীন-মার্কিন বাণিজ্য আলোচনা এখনো ঘোষণা করা হয়নি, তবে গত সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত APEC বাণিজ্য মন্ত্রী সম্মেলনের ফাঁকে দুই দেশের প্রতিনিধিরা বৈঠক করেছেন।চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সাময়িক শান্তি স্থাপিত হলেও, হুয়াওয়ের এআই চিপ এবং প্রযুক্তি নিয়ে চলমান উত্তেজনা ভবিষ্যতে নতুন করে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মন্তব্য (০)