ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ

রাশিয়া চালালো রাজধানী কিয়েভে প্রাণঘাতী বিমান হামলা, চললো বৃহৎ বন্দি বিনিময়

রাশিয়া চালালো রাজধানী কিয়েভে প্রাণঘাতী বিমান হামলা, চললো বৃহৎ বন্দি বিনিময় Image সংগৃহীত | ছবি: সংগৃহীত
ইমেইল :

রাশিয়া দ্বিতীয় রাতের মতো ধারাবাহিকভাবে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে, একই সময় দুই পক্ষ শুরু করেছে শতাধিক যুদ্ধবন্দীর বিনিময় কার্যক্রম।কিয়েভ অঞ্চলের সামরিক প্রশাসন জানিয়েছে, রোববার ভোর পর্যন্ত হামলায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। এর আগের দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে রাশিয়ান হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছিল।কিয়েভ কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, এই হামলায় ১০ জন আহত, যাদের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছেন। পাশাপাশি, রাজধানীর বিভিন্ন অংশে বহু আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।রাতভর কিয়েভে বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন বাজানো হয়, এবং বাসিন্দাদের আশ্রয়ে থাকার জন্য সতর্ক করা হয়। কর্তৃপক্ষ বলেছে, ড্রোন হামলা অব্যাহত রয়েছে এবং রাজধানীর ওপর থেকে নেমে আসছে।কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিটস্কো টেলিগ্রামে লিখেছেন, "রাজধানী আবারও একটি বিশাল হামলার মুখে পড়েছে"।এই হামলা এমন এক সময়ে এসেছে যখন আন্তর্জাতিক মহল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণের জন্য এবং তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে অবসান ঘটানোর আহ্বান জানাচ্ছে।সেই সঙ্গে, চলতি মাসের শুরুতে কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে তিন বছর পর প্রথম সরাসরি আলোচনার পরিমাণ হিসেবে একমাত্র বড় সিদ্ধান্ত হয়েছিল বন্দি বিনিময় নিয়ে। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই বন্দি মুক্তির কার্যক্রম তিন দিন চলার কথা।কিয়েভ ও অন্যান্য শহরে রুশ হামলার তীব্রতা বৃদ্ধিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার হামলা ইউক্রেনের বিভিন্ন অংশে লক্ষ্যভেদ করছে, তবে মূলত কিয়েভেই সবচেয়ে বেশি আক্রমণ হচ্ছে, বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী।শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আহতদের পরিবার ও স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেছেন, “সারা ইউক্রেনের জন্য এটি একটি কঠিন রাত ছিল”।পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাতের হামলায় কিয়েভে অন্তত ১৮ জন আহত হয়েছেন।কিয়েভের সংসদ সদস্য কিরা রুদিক সিএনএনে বলেন, তিনি রাতটি ‘সিঁড়ির নিচে’ লুকিয়ে কাটিয়েছেন এবং বোমা বিস্ফোরণের শব্দকে ‘আর্মাগেডন’ বলেও বর্ণনা করেন।ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্রুজ মিসাইল দিয়ে সমন্বিত হামলাইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, শিপ ও বিমান থেকে উৎক্ষেপিত ড্রোন, ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে একযোগে বহু শহরের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে, যা বন্দি বিনিময়ের তৃতীয় দিনের আগে আরও তীব্র হয়েছে।বন্দি বিনিময় কার্যক্রমশুক্রবার

প্রথম ধাপে প্রায় ৮০০ বন্দি মুক্তি পায়, আর শনিবার দ্বিতীয় ধাপে আরও ৬০০ রুশ ও ইউক্রেনীয় সেনা মুক্তি পেয়েছেন।ইউক্রেনের বন্দি চিকিৎসা সমন্বয় কেন্দ্রে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিরা মাথা ন্যাড়া করে ইউক্রেনের পতাকা দিয়ে মোড়ানো, একে অপরকে জড়িয়ে ধরে এবং ফোনে তাদের প্রিয়জনদের সাথে কথা বলছেন।এই বন্দি বিনিময় চুক্তি ছিল কিয়েভ ও মস্কোর ইস্তানবুল বৈঠকের একমাত্র বড় ফলাফল, যেখানে দীর্ঘ তিন বছর পর সরাসরি বৈঠক হয়েছিল।একজন ইউক্রেনীয় নারী ওলেনা, যাঁর স্বামী ইউরিয় ছয় মাস রাশিয়ান বন্দিত্বে ছিলেন, শনিবার বন্দি বিনিময়ে তাঁকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়েছেন। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভিডিওতে দেখা গেছে তিনি দৌড়ে গিয়ে স্বামীর কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরছেন।ওলেনা বলেন, “এটি আমার জীবনের সেরা দিন। আমি ছুটে বেড়াচ্ছিলাম, তাকে খুঁজছিলাম, চিৎকার করছিলাম। আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ”।রুশ পক্ষের দাবি ও ইউক্রেনের হামলারাশিয়া বলছে, তারা ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার শিকার হয়েছে।রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল রবিবার পর্যন্ত তারা প্রায় ১০০টি আক্রমণাত্মক ড্রোন ধ্বংস করেছে। এর অধিকাংশ ধ্বংস হয়েছে দেশের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে, আর মস্কোর আশেপাশে দুই ড্রোন ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে।মস্কোর মেয়র সার্গেই সোব্যানিন টেলিগ্রামে জানিয়েছেন, রাজধানীর আশেপাশে ধ্বংস বা আটকানো ড্রোনের সংখ্যা বেড়ে ১১ হয়েছে।গতকাল মন্ত্রণালয় বলেছে, প্রধানত বেলগোরোড ও ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে তারা ৯৪টি ইউক্রেনীয় ইউএভি ধ্বংস করেছে। এছাড়া কুরস্ক, লিপেতস্ক, ভোরোনেজ ও তুলা অঞ্চলেও ড্রোন ধ্বংসের খবর এসেছে।তুলা অঞ্চলের গভর্নর দিমিত্রি মিলিয়ায়েভ শনিবার বলেছেন, তিনজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজন হাসপাতালে ভর্তি।ইস্তানবুল বৈঠক ও যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবইস্তানবুল বৈঠকটি মূলত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রস্তাবিত, যা ইউরোপীয় মিত্রদের থেকে আসা যুদ্ধবিরতি অথবা নিষেধাজ্ঞার চূড়ান্ত চাপের জবাবে ছিল।ইউক্রেন ও তাদের মিত্ররা চেয়েছিলেন, রাশিয়া যেন তৎক্ষণাৎ ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়, কিন্তু বৈঠকে তা বাস্তবায়িত হয়নি এবং কোন বড় কোনো অগ্রগতি হয়নি।সংক্ষেপে, রাশিয়ার বন্যা সন্ত্রাস চলাকালীনেই বন্দি বিনিময় চলছে, যা সামরিক ও কূটনৈতিক মঞ্চে কিছুটা ইতিবাচক হলেও, যুদ্ধ পরিস্থিতি তীব্র অবস্থায় আছে। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে শান্তি আলোচনা এখনও বড় ধাপ পার হয়নি।

সম্পর্কিত ট্যাগ :

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর