ভারত ও পাকিস্তান আকস্মিকভাবে শনিবার একটি তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে, যা দু'দেশের মধ্যে দশকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষের হঠাৎ অবসান ঘটিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে — এই যুদ্ধবিরতি কতটা টেকসই হবে? কার মাধ্যমে এলো যুদ্ধবিরতির ঘোষণা?শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম Truth Social-এ জানান, "যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ রাতের আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান একটি সম্পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।" তিনি উভয় দেশের নেতাকে "বুদ্ধিমত্তা ও সাধারণ জ্ঞান" ব্যবহারের জন্য অভিনন্দন জানান।এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, দু’দেশ কেবল যুদ্ধবিরতিতেই নয়, বরং একটি নিরপেক্ষ স্থানে বিস্তৃত আলোচনায় বসারও সম্মতি দিয়েছে। দ্বিমুখী বক্তব্য: কে কতটুকু ভূমিকা রেখেছে?পাকিস্তান সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে কৃতিত্ব দিয়ে প্রশংসা করে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বলেন, “এ অঞ্চলে শান্তির জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্ব ও সক্রিয় ভূমিকার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।”অন্যদিকে, ভারতের তথ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এই চুক্তি "উভয় দেশের মধ্যে সরাসরি আলোচনা" থেকে এসেছে, এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। পাশাপাশি তারা আরও জানায়, আলোচনার কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি। কেন এত ভিন্ন ভিন্ন বার্তা?বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিভেদ আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার বিষয়ে দুই দেশের বিপরীত অবস্থানেরই প্রতিফলন।ভারত চিরকাল আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার বিরোধিতা করে, বিশেষ করে কাশ্মীর ইস্যুতে। অন্যদিকে, পাকিস্তান বরাবরই আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করে। শনিবারের সংঘর্ষ: যুদ্ধবিরতির ঠিক আগে কী ঘটেছিল?শনিবার ভোরে পাকিস্তান অভিযোগ করে যে ভারত তাদের একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে একটি ইসলামাবাদের কাছাকাছিও ছিল। এর জবাবে পাকিস্তান ভারতের বিমানঘাঁটিগুলোতে পাল্টা হামলা চালায়।প
াকিস্তানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, "চোখের বদলে চোখ।"এরপর কাশ্মীরের শ্রীনগর ও জাম্মু শহরে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা ভারতের আগ্রাসনের "জবাব দিয়েছে গর্জে উঠে"। কীভাবে এই উত্তেজনা শুরু?ঘটনার সূত্রপাত ২৬ এপ্রিল, যখন ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহালগামে পর্যটকদের উপর বন্দুকধারীরা হামলা চালায়। এতে ২৫ জন ভারতীয় ও একজন নেপালি নিহত হন।ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দোষারোপ করে, কিন্তু পাকিস্তান সম্পূর্ণ দায় অস্বীকার করে।এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত “অপারেশন সিন্দুর” নামে পাকিস্তানের ভূখণ্ড ও নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে একাধিক হামলা চালায়। সংঘর্ষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং উভয় পক্ষ একে অপরের মূল ভূখণ্ডেও হামলা চালায়, যা আগের যেকোনো সংঘর্ষের চেয়ে বেশি বিস্তৃত ছিল। যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ জড়ালো কেন?মাত্র দুই দিন আগেই মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছিলেন, এই সংঘর্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ কিছু করার সুযোগ নেই।কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে সংঘর্ষ ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কাজনক তথ্য আসার পর, স্টেট ডিপার্টমেন্ট হস্তক্ষেপে বাধ্য হয়। তারপরই আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির পথ খুলে যায়। যুদ্ধবিরতি টিকবে তো?যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে।ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, পাকিস্তান বারবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে। একইসঙ্গে, পাকিস্তানও ভারতকে দোষারোপ করে, তবে তারা যুদ্ধবিরতির প্রতি “পূর্ণাঙ্গ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ” থাকার কথা জানায়।এছাড়াও, পর্যটক হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় উভয় দেশ ভিসা স্থগিত, বাণিজ্য বন্ধ এবং পানি বণ্টন চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর মতো কঠোর পদক্ষেপ নেয়। এখন পর্যন্ত এসব সিদ্ধান্ত আবার চালু হবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়।আপডেট থাকুন | দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতি সম্পর্কে সত্য, নির্ভরযোগ্য ও বিশ্লেষণভিত্তিক খবর জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
মন্তব্য (০)