ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ

ভারত–পাকিস্তানের হাতে পারমাণবিক বোমার চেয়েও ভয়ংকর অস্ত্র

ভারত–পাকিস্তানের হাতে পারমাণবিক বোমার চেয়েও ভয়ংকর অস্ত্র Image সংগৃহীত | ছবি: সংগৃহীত
ইমেইল :

কাহিনী তৈরির লড়াইয়ে সত্য চাপা পড়ে যাচ্ছে যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপেসাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘাত আমাদের চোখে একটি নতুন বাস্তবতা স্পষ্ট করে দিয়েছে—দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ভয়ংকর অস্ত্র আসলে পারমাণবিক বোমা নয়, বরং বয়ান বা কাহিনি।ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করল, আর পাকিস্তান পাল্টা দিল ‘অপারেশন বুনিয়ান আল–মারসুস’। কিন্তু এটিকে যদি শুধু সামরিক হামলা হিসেবে দেখা হয়, তাহলে আসল যুদ্ধকে বুঝতে আমরা ব্যর্থ হবো।এটি ছিল ভাষার যুদ্ধ, গণমাধ্যমে পরিচালিত ‘বয়ানের লড়াই’এই সংঘাতের ময়দান ছিল গণমাধ্যম। গোলাবারুদ ছিল ভাষা। আর এই যুদ্ধে হতাহত হয়েছে সত্য।ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশের সংবাদমাধ্যম যুদ্ধটিকে উপস্থাপন করেছে এক পরিকল্পিত গল্প আকারে—যেখানে প্রতিটি সহিংসতা ছিল পূর্বনির্ধারিত চিত্রনাট্য অনুযায়ী পরিচালিত।দৃশ্য এক: ভারতীয় বয়ান—‘ন্যায়সংগত আঘাত’৬ মে ভারতীয় বাহিনী প্রথম আঘাত হানে। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে ভারত ২৫ মিনিটে চালায় ২৪টি হামলা। দাবি করা হয়, ৯টি ‘সন্ত্রাসের ঘাঁটি’ ধ্বংস হয়েছে, কোনো বেসামরিক প্রাণহানি হয়নি।গণমাধ্যমে শিরোনাম আসে—‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ২.

০’, ‘ভারতীয় সেনার গর্জন পৌঁছাল রাওয়ালপিন্ডিতে’। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, ‘তারা ভারতের কপালে আঘাত করেছিল, আমরা তাদের বুকে আঘাত করেছি।’ভারতের গণমাধ্যম নিজেদের এক নৈতিক রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরে—যে আগ্রাসী নয়, বরং ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে আছে।দৃশ্য দুই: পাকিস্তানের বয়ান—‘পবিত্র প্রতিরক্ষা’তিন দিন পর পাকিস্তান চালায় ‘অপারেশন বুনিয়ান আল–মারসুস’। যার অর্থ—‘লোহার প্রাচীর’। এটি ছিল শুধুমাত্র প্রতিশোধ নয়, বরং এক জাতীয় ধর্মীয় আহ্বান।পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্র ভারতীয় সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ঘোষণা দেন—‘১৯৭১-এর প্রতিশোধ’ নেওয়া হয়েছে।গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে শহীদদের ছবি, মসজিদে হামলার দৃশ্য। দেশপ্রেমে উত্তাল হয়ে ওঠে পাকিস্তান। তারা নিজেদের শান্তিপ্রিয়, কিন্তু দৃঢ় রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করে।উভয় দেশের বয়ানে অবিশ্বাস্য মিলদুই রাষ্ট্রই দাবি করে—তারা আগ্রাসী নয়, আত্মরক্ষায় বাধ্য হয়েছে। উভয়ই নিজেদের তুলে ধরে নৈতিক শক্তির পক্ষে, এবং শত্রুকে দেখায় একটি মতাদর্শগত হুমকি হিসেবে।ভারত পাকিস্তানকে উপস্থাপন করে ‘সন্ত্রাসের ঘাঁটি’, আর পাকিস্তান ভারতের ওপর চড়াও হয় ‘ধর্মদ্রোহী’ ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র হিসেবে।সত্য হারিয়ে যায় ‘আয়নার ঘরে’উভয় রাষ্ট্রই একে অপরের বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ আনে। সংবাদমাধ্যম হয়ে ওঠে ‘আরশিনগর’—যেখানে কেবল নিজের প্রতিচ্ছবিই দেখা যায়।অর্থাৎ, এখানে ‘আমাদের’ মৃতরা শহীদ, আর ‘ওদের’ ক্ষয়ক্ষতি অদৃশ্য অথবা বানানো। এই অবস্থায় ন্যায়বিচার হারিয়ে যায়, সংলাপ বন্ধ হয়ে যায়।মূল লড়াই ছিল বৈধতা ও আত্মপরিচয়েরভারত চাইছিল ‘সন্ত্রাসবিরোধী বৈধতা’, আর পাকিস্তান চাইছিল ‘সার্বভৌমত্ব রক্ষার বৈধতা’। উভয়েই নিজেদের জনগণ ও বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছে ইতিহাসের ‘সঠিক পক্ষে’ থাকা পক্ষ হিসেবে।অস্ত্রবিরতি, কিন্তু থেকে গেল ‘বয়ানের যুদ্ধ’১৩ মে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতি হয়। উভয় পক্ষই নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করে। কিন্তু তাদের তৈরি করা গল্প, ‘আমরাই সঠিক, ওরা ভুল’—এই বয়ান থেকেই যায়।এই বয়ানই আগামীতে পাঠ্যপুস্তক, বাজেট, নির্বাচন ও যুদ্ধের ভিত্তি হয়ে উঠবে।সমাধান? বয়ানের পরিবর্তনদক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ভয়ংকর অস্ত্র পারমাণবিক বোমা নয়। সেটি হলো গল্প বা বয়ান। যতক্ষণ না এই গল্প বদলাবে, ততক্ষণ পরিবর্তন অসম্ভব।আমরা যদি অন্য পক্ষের কষ্টের কথা না শুনি, তাহলে পরবর্তী সহিংসতা আরও সহজ হয়ে যাবে।এখন সময় এসেছে নতুন করে শোনার। সত্যের প্রতি দায়বদ্ধ হওয়া। কারণ, কাহিনি যদি ভুল হয়, ইতিহাসও ভুল পথে হাঁটে।

সম্পর্কিত ট্যাগ :

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর