একটি পারিবারিক মধ্যাহ্নভোজের নিমন্ত্রণে না গিয়ে নিজের জীবন বাঁচিয়েছিলেন সাইমন প্যাটারসন। আজ অস্ট্রেলিয়ার আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে তিনি জানালেন, প্রাক্তন স্ত্রী এরিন প্যাটারসনের বাড়িতে সামাজিক জমায়েত ছিল খুবই বিরল ঘটনা।২০২৩ সালের জুলাইয়ে লাঞ্চের টেবিলে বিফ ওয়েলিংটনের সঙ্গে বিষাক্ত মাশরুম খেয়ে মৃত্যু হয় তিনজনের, গুরুতর অসুস্থ হন আরও একজন। ঘটনার পর এরিন প্যাটারসনের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা ও একটি হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়।সাইমন প্যাটারসন নিজেও আমন্ত্রিত ছিলেন সেই ভোজে, কিন্তু আগের দিনই না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আদালতে তিনি বলেন, "আমি খুব একটা স্বস্তিবোধ করিনি, তাই যাইনি।""ক্যানসারে আক্রান্ত" বলে আমন্ত্রণ – অভিযোগ পক্ষের দাবিআদালতে জানানো হয়, এরিন তাঁর আত্মীয়দের বলেছিলেন যে তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। এই অজুহাতেই সবাইকে একত্র করছিলেন বলে অভিযোগ। অথচ সেই মধ্যাহ্নভোজের খাবারেই ছিল 'ডেথ ক্যাপ' নামে পরিচিত মারাত্মক বিষাক্ত মাশরুম।মৃতদের মধ্যে রয়েছেন এরিনের প্রাক্তন শ্বশুর-শাশুড়ি ডন ও গেইল প্যাটারসন, এবং গেইলের বোন হিদার উইলকিনসন। গুরুতর অসুস্থ হন পাস্টর ইয়ান উইলকিনসন, যিনি পরে সুস্থ হন দীর্ঘ চিকিৎসার পর।"ভিন্ন রঙের প্লেটে নিজের খাবার নিয়েছিলেন এরিন" – মৃত্যুর আগে বলেছিলেন হিদারসাইমন আদালতে বলেন, হিদার উইলকিনসন মৃত্যুর আগে তাঁকে একটি অদ্ভুত তথ্য জানিয়েছিলেন। "আমি খেয়াল করলাম, এরিন নিজের খাবার ভিন্ন রঙের একটি প্লেটে নিয়েছেন," হিদার বলেছিলেন। পরে তিনি আবারও বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, "এরিন কি বাসনে টানাটানি পড়েছে?"সাইমন সেই মুহূর্তে গুরুত্ব না দিলেও আজ আদালতে স্বীকার করেন, বিষয়টি এখন সন্দেহজনক মনে হচ্ছে।‘
এটা ইচ্ছাকৃত ছিল না, আমি ভয় পেয়েছিলাম’ – এরিনের দাবিআসামিপক্ষের আইনজীবীর দাবি, এরিন ইচ্ছাকৃতভাবে বিষ মেশাননি। তিনি প্রিয়জনদের অসুস্থ দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তাই পরে কিছু পদক্ষেপ গোপনে নিয়েছিলেন।বিষাক্ত মাশরুম কোথা থেকে এলো?প্রসিকিউশনের দাবি, এরিন মিথ্যা বলেছিলেন—তিনি বলেছিলেন মাশরুমগুলি মেলবোর্নের একটি এশিয়ান গ্রোসারি থেকে এনেছেন। কিন্তু তদন্তে দেখা গেছে, তিনি বাড়ির কাছেই একটি জায়গা থেকে মাশরুম তুলেছিলেন, যেটি ‘ন্যাচারালিস্ট’ ওয়েবসাইটে ডেথ ক্যাপের জন্য পরিচিত।এমনকি, তিনি একটি ফুড ডিহাইড্রেটর নষ্ট করে ফেলতে স্থানীয় ডাম্পে নিয়ে যান, যাতে প্রমাণ লোপাট করা যায়। প্রসিকিউশন এটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজ হিসেবে দেখছে।বিয়ের ইতিহাস ও দাম্পত্য সংকটের চিত্রসাইমন ও এরিন ২০০৭ সালে বিয়ে করেন, কিন্তু ২০১৫ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটে। তবে ততদিনে দুই সন্তানের জন্ম হয়েছে। বিচ্ছেদের পরও দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় ছিল। কিন্তু ২০২২ সালে ট্যাক্স রিটার্নে ‘সেপারেটেড’ হিসেবে নাম লেখানোর পর এরিন ক্ষুব্ধ হন, এবং সম্পর্কের উষ্ণতা নষ্ট হয়।সাইমন জানান, এরিন ছিলেন চতুর, মজাদার ও শিক্ষিত। তিনি ব্যবসা ও হিসাববিজ্ঞানে ডিগ্রিধারী, এবং একজন প্রশিক্ষিত এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলার।শেষ সাক্ষ্য: মৃত্যুর মুখে বাবা-মাকে দেখার বর্ণনাসাইমন বলেন, হাসপাতালে গিয়ে দেখেন বাবা মা আলাদা বিছানায়, কিন্তু একই কক্ষে। "বাবা অনেক খারাপ অবস্থায় ছিলেন। মুখ বিবর্ণ, কষ্ট পাচ্ছিলেন, কথা বলতে পারছিলেন না।"এ ঘটনায় এখনো বিচার চলছে। প্রশ্ন একটাই—এরিন প্যাটারসন ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবারের সদস্যদের হত্যা করতে চেয়েছিলেন, নাকি এটি একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা?
মন্তব্য (০)