ইসরায়েল রবিবার গাজার ওপর তীব্র বিমান হামলার পাশাপাশি ব্যাপক স্থল অভিযান শুরু করেছে। গাজা কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এক রাতেই ১০০-এর বেশি ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং গাজার উত্তরের একমাত্র কার্যকর হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে।ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এই স্থল অভিযান গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অংশে পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধবিরতি আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।রবিবার কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস ও ইসরায়েল পরোক্ষ আলোচনা শুরু করেছে। হামাসের সিনিয়র নেতা তাহের আল-নুনু আল আকসা টিভিকে নিশ্চিত করেছেন যে, “শর্ত ছাড়াই আলোচনা শুরু হয়েছে।” যদিও আলোচনায় কিছুটা আশাবাদী মনোভাব রয়েছে, তবু সফলতার নিশ্চয়তা নেই। ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত যদি হামাস আত্মসমর্পণ করে, যা হামাস গ্রহণের সম্ভাবনা কম।হামাস জানিয়েছে, তারা সব ইসরায়েলি বন্দী মুক্তি দেবে যদি যুদ্ধ বন্ধ করার নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। তবে আলোচনার এক সিনিয়র হামাস নেতা সামি আবু জুহরী পরে এ ধরনের কোনো প্রস্তাব অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, “আমরা একযোগে বন্দীদের মুক্তি দিতে প্রস্তুত, যদি বিরোধীদের নিরন্তর আগ্রাসন বন্ধ করার আন্তর্জাতিক নিশ্চয়তা পাওয়া যায়।”ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাদের নতুন অভিযানের নাম দিয়েছেন “গিদেওনের রথ”, যা বাইবেলীয় যোদ্ধার প্রতি ইঙ্গিত। শুক্রবার রাতে ঘোষণা করা এই অভিযান হামাসকে পুনরায় আলোচনায় ফেরাতে সহায়তা করেছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় জানিয়েছে, “অপারেশন চলাকালীন গাজায় ক্ষুধা প্রতিরোধে সীমিত পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।”ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বক্তব্য, “এই অভিযান যুদ্ধের সমস্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য, যার মধ্যে বন্দীদের মুক্তি এবং হামাসের পরাজয় অন্তর্ভুক্ত।”আইডিএফের মুখপাত্র এফি ডেফ্রিন জানিয়েছেন, “অপারেশনের সময় আমরা গাজা অঞ্চলে আমাদের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করবো এবং জনসাধারণকে সুরক্ষার জন্য স্থানান্তর করবো।”বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হামাস হয়তো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যে সফরের পর আলোচনা পুনরায় শুরু করতে রাজি হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিশর মধ্যস্থতা করছে নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য।নেতানিয়াহু ইতিমধ্যে ইসরায়েলি আলোচক দলকে কাতারে পাঠিয়েছেন, তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি শুধু মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবকে মেনে
নেবেন, যেখানে অর্ধেক বন্দী মুক্তির বিনিময়ে সাময়িক যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে, যা যুদ্ধের অবসান নিশ্চিত করে না।ট্রাম্প দোহায় থাকাকালীন বলেছিলেন, তিনি গাজাকে “স্বাধীনতার অঞ্চল” হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত থাকবে।শিশুসহ পুরো পরিবার ধ্বংসজাতিসংঘ ও প্রধান মানবতাবাদী সংস্থাগুলো ইসরায়েলের নতুন হামলার বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, কারণ মূলত সাধারণ মানুষই এর শিকার হচ্ছেন।গাজায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত সপ্তাহে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ৩০০’র বেশি নিহত এবং ১,০০০’রও বেশি আহত হয়েছেন। পুরো পরিবার একই সঙ্গে নিহত হয়েছে, যেমন দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি এলাকায় একটি শিশুসহ পাঁচ সদস্যের পরিবার ধ্বংস হয়েছে।গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে। উত্তরের বেঁইত লাহিয়ায় অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালটি মারাত্মক বোমাবর্ষণের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। হাসপাতালের পরিচালক ড. মারওয়ান আল-সুলতান জানিয়েছেন, হাসপাতালের অক্সিজেন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তীব্র পরিস্থিতিতে তারা গভীর অসহায়।গাজায় খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাইসরায়েল রবিবার গাজায় “সীমিত পরিমাণ খাদ্য” প্রবেশের অনুমতি দেয়ার আগে জাতিসংঘ সতর্ক করেছে যে, গাজার ২.১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি।একটি আমেরিকান-সমর্থিত প্রতিষ্ঠান, গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ), খাদ্য সহায়তার জন্য ইসরায়েলের ঘোষণা স্বাগত জানিয়েছে। তবে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, এই উদ্যোগ যথেষ্ট নয় এবং এটি গাজার মানুষদের অবাঞ্ছিত স্থানান্তরকে উৎসাহিত করতে পারে।মৃত্যুর সংখ্যা ও মানবিক সংকটঅক্টোবর ৭, ২০২৩ তারিখের হামলার পর গাজার মধ্যে নিহতের সংখ্যা ৫৩,০০০ ছাড়িয়ে গেছে, যার অধিকাংশই নারী ও শিশু।গাজার সাধারণ মানুষ তাদের যন্ত্রণার জন্য বিশ্বের অবহেলা অনুভব করছেন। হামলার শিকার ও পরিবারহারা বহু মানুষের জীবন অতিরিক্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।আইডিএফ জানায়, তাদের অভিযান চলাকালীন বন্দীদের নিরাপত্তা বিবেচনা করা হচ্ছে, তবে বন্দী পরিবারদের সংগঠন এই অভিযানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, কারণ এটি বন্দীদের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে ফেলে।ইসরায়েল গাজায় স্থল ও বিমান অভিযান চালাচ্ছেরাতভর বিমান হামলায় ১০০+ নিহত, হাসপাতাল বন্ধহামাস ও ইসরায়েলের পরোক্ষ আলোচনা চলছেখাদ্য সংকটের কারণে গাজার দুর্ভিক্ষের আশঙ্কামানবিক সংকট তীব্র, সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত
মন্তব্য (০)