গাজা জুড়ে রাতভর ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া পরিবারের ওপর হামলায় ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক ও সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তারা।হামলাটি গাজা সিটির ফাহমি আল-জারগাওয়ি স্কুলে হয়, যেখানে বেইত লাহিয়া থেকে পালিয়ে আসা শত শত বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানায়, দুইটি ক্লাসরুমে আগুন ধরে যাওয়ার পর সেখানে থেকে পুড়ে যাওয়া ২০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে শিশুও রয়েছে।ভয়াবহ দৃশ্যের বিবরণএক প্রত্যক্ষদর্শী রামি রাফিক বলেন,"সর্বত্র আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। আমি পোড়া মরদেহ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেছি। আমার ছেলে ওই দৃশ্য দেখে অজ্ঞান হয়ে যায়।"অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, স্কুলটির কিছু অংশে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে, পোড়া দেহ পড়ে আছে, আহতরা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।হামলায় নিহত পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও পরিবারস্থানীয় সূত্র জানায়, উত্তর গাজার হামাস পুলিশের তদন্ত বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আল-কাসিহ এই হামলায় নিহত হয়েছেন। তার স্ত্রী ও সন্তানরাও নিহত হয়েছে।আরেকটি হামলায় নিহত আরও ৪ জনস্কুল হামলার কিছুক্ষণ আগেই গাজা সিটির একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরও ৪ জন নিহত হন বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলার পরিসংখ্যানশুক্রবার গাজার এক ডাক্তারের বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় তার ১০ সন্তানের মধ্যে ৯ জন নিহত হন।রেড ক্রসের দুই কর্মী শনিবার খান ইউনিসে হামলায় নিহত হন।আন্তর্জাতিক চাপ বা
ড়ছেইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রস (ICRC) বলেছে, তাদের কর্মীদের মৃত্যুর ঘটনা গাজায় বেসামরিক প্রাণহানির "অসহনীয় মাত্রা" তুলে ধরে। সংস্থাটি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।মানবিক সহায়তা বিতরণে প্রতিবন্ধকতা ও পদত্যাগএক যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল অনুমোদিত বেসরকারি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক পদত্যাগ করেছেন, যাদের লক্ষ্য ছিল গাজায় বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করা।গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী জেক উড বলেন, এই প্রকল্পটি স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।ত্রাণ সহায়তার ঘাটতিইসরায়েল ২ মার্চ গাজায় পূর্ণ অবরোধ জারি করে, যা ১১ সপ্তাহ স্থায়ী হয়।শনিবার Cogat জানায় ৩৮৮টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে, তবে জাতিসংঘ বলছে, প্রতিদিন ৫০০-৬০০ ট্রাক প্রয়োজন।স্পেনসহ ২০টি দেশের বৈঠকমাদ্রিদে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ২০টি দেশ ও সংগঠন গাজা যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা করেছে।স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল হামলা বন্ধ না করলে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানান।পরিস্থিতির পটভূমি২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল হামলায় ১,২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হয়। এর জবাবে ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে।গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৩,৯৩৯ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৬,৫০০ জনের বেশি শিশু।স্কুলে আশ্রয় নেওয়া নিরীহ মানুষের ওপর বিমান হামলা ও শিশুদের মৃত্যুর ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। ত্রাণ সহায়তা, যুদ্ধবিরতি ও মানবিক করিডর তৈরির বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
মন্তব্য (০)