চীনের তিয়ানগং মহাকাশ স্টেশনে প্রথমবারের মতো একজন বিদেশি নভোচারী প্রবেশ করতে যাচ্ছেন — তিনি হবেন পাকিস্তানের নাগরিক। এই ঐতিহাসিক মিশনের মাধ্যমে বেইজিং ও ইসলামাবাদের মহাকাশ সহযোগিতা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের মহাকাশ প্রতিযোগিতার মধ্যেই ঘটছে। মহাকাশে পাকিস্তানের নতুন ইতিহাসচীনের মানববাহিত মহাকাশ সংস্থা জানায়, এই মিশনে যে পাকিস্তানি নভোচারী পাঠানো হবে, তিনি হবেন ‘পেলোড স্পেশালিস্ট’, যার দায়িত্ব থাকবে গবেষণা পরিচালনা ও দৈনন্দিন কাজ সম্পন্ন করা। নভোচারী নির্বাচনের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।পাকিস্তানের মহাকাশ সংস্থা SUPARCO’র উপ-পরিচালক আমজাদ আলী জানান, প্রাথমিকভাবে ৫ থেকে ১০ জন প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে, যেখান থেকে চীন ২ জনকে বেছে নেবে। এদের একজন যাবেন মহাকাশে, অন্যজন থাকবেন রিজার্ভে। প্রশিক্ষণ চলবে ছয় মাস থেকে এক বছর।“চীনের সঙ্গে এই প্রথম মহাকাশে পাকিস্তানি নভোচারীর অংশগ্রহণ আমাদের জন্য এক বিশাল অর্জন,” — বলেন আমজাদ আলী। চীন-পাকিস্তানের মহাকাশ কূটনীতিএর আগেও চীনের মাধ্যমে পাকিস্তান একটি স্যাটেলাইট পাঠিয়েছিল চাঁদের উদ্দেশ্যে, যেখানে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা, ফ্রান্স ও ইতালির সঙ্গেও সহযোগিতা হয়েছিল। মহাকাশে এই অংশীদারিত্ব চীন-পাকিস্তান কৌশলগত সম্পর্ককে আরও মজবুত করেছে।চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের মধ্যে একটি মহাকাশ সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার ফলেই এ মিশনের ঘোষণা আসে। এছাড়া সম্প্রতি চীনা মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান Galaxy Space-এর একটি প্রতিনিধি দল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যৌথ উদ্যোগে কাজের আগ্রহ প্রকাশ করে।প্রধানমন্
ত্রী বলেন, “চীন আমাদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধু ও কৌশলগত অংশীদার। আমরা মহাকাশ প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট ও স্যাটেলাইট ইন্টারনেট খাতে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী।” কী গবেষণা হবে মহাকাশে?SUPARCO-র একজন কর্মকর্তা আমের গিলানি জানান, যেসব গবেষণা মহাকাশে করা হবে সেগুলো হবে বিজ্ঞান, শিল্প ও সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে থাকতে পারে জীববৈজ্ঞানিক পরীক্ষা, স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন ও মহাকাশ প্রযুক্তি বিষয়ক কার্যক্রম। চীনের নতুন মিশনেও বৈজ্ঞানিক বৈচিত্র্যআগামী বৃহস্পতিবার চীন শেনঝৌ-২০ নামক একটি নতুন মানববাহী মিশন উৎক্ষেপণ করবে, যেখানে তিনজন চীনা নভোচারী তিয়ানগং স্টেশনে যাবেন। তারা বিজ্ঞান, মহাকাশ আবর্জনা প্রতিরোধ, এবং নতুন যন্ত্রাংশ স্থাপনসহ বিভিন্ন কাজ করবেন। সেইসঙ্গে জীববিজ্ঞানের জন্য নিয়ে যাবেন জেব্রাফিশ, প্ল্যানারিয়ান ও স্ট্রেপ্টোমাইসিস ব্যাকটেরিয়া।চীন এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০টি মহাকাশ সহযোগিতা চুক্তি করেছে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে। এছাড়া চাঁদের মাটি থেকে সংগৃহীত নমুনাও সম্প্রতি সাতটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে, যার মধ্যে পাকিস্তানও রয়েছে। বিশ্বব্যাপী মহাকাশ সহযোগিতার বার্তাহংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী কোয়েন্টিন পার্কার বলেন,“বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি যতই জটিল হোক না কেন, এই ধরনের আন্তর্জাতিক মহাকাশ সহযোগিতা ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” পাকিস্তানের জন্য এটি শুধু এক ঐতিহাসিক মহাকাশ মিশন নয়, বরং আন্তর্জাতিক মঞ্চে এক নতুন পরিচয়ের সূচনা।এদিকে চীন মহাকাশে তার কৌশলগত কূটনীতি আরও শক্তিশালী করে তুলছে, যেখানে পাকিস্তান এখন অন্যতম সহযোগী হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে।
মন্তব্য (০)