ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

অন্যান্য

সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : ‘ক্লিনিক্যাল ক্লাস’-এর সুযোগ বঞ্চনার প্রতিবাদ

সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : ‘ক্লিনিক্যাল ক্লাস’-এর সুযোগ বঞ্চনার প্রতিবাদ Image সংগৃহীত | ছবি: সংগৃহীত
ইমেইল :

সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে এক অভূতপূর্ব সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে শুরু হওয়া ক্লিনিক্যাল ক্লাস বা হাতে-কলমে শিক্ষার অভাবে তাঁদের পেশাগত দক্ষতা অর্জনে তৈরি হচ্ছে গুরুতর বাধা। বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে হাসপাতালে রোগীর সংস্পর্শে থেকে ওয়ার্ডভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতির সুযোগ না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা শেষ করছেন এক প্রকার ঘাটতি নিয়েই।১৫ এপ্রিল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে নামেন। এর মধ্যে রয়েছে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, স্মারকলিপি প্রদান, এমনকি সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি। কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে প্রতিবাদ জানানোও হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, হাসপাতাল চালু না থাকায় নিয়মিত ক্লিনিক্যাল ক্লাস হচ্ছে না, আর এটাই তাঁদের প্রধান ক্ষোভ।কেন এই আন্দোলন?সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজে বর্তমানে পাঁচটি ব্যাচে মোট ২,২৮০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। ২০২১ সালে শান্তিগঞ্জ উপজেলার একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কলেজের অস্থায়ী কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা কার্যক্রম চালু না থাকায় ব্যবহারিক শিক্ষার সুযোগ ছিল না। পরবর্তীতে জেলা সদর হাসপাতালে সাপ্তাহিক দুদিন ক্লাসের ব্যবস্থা করা হলেও, ১৮ কিলোমিটার দূরত্ব ও অনিয়মিত যাতায়াতের কারণে কার্যকর ক্লাস চালানো সম্ভব হয়নি।তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শাহপরান ভূঁইয়া বলেন, “আমাদের মেডিকেল শিক্ষায় ক্লিনিক্যাল ক্লাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা সেই সুযোগ থেকেই বঞ্চিত। বারবার আবেদন করেও কোনো ফল পাইনি।” চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম ও পিয়াস চন্দ্র দাস জানান, স্থানীয় বাসিন্দারাও তাঁদের এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন, কারণ হাসপাতাল চালু না থাকায় আমজনতাও চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না।শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি২০২৫ সালের জুনের আগেই জেলা সদর হাসপাতাল চালু করতে হবেসপ্তাহে ৬ দিন ক্লিনিক্যাল ক্লাস চালু রাখতে হবেকমপক্ষে ৩টি বাসে নিয়মিত যাতায়াত নিশ্চিত করতে হবেস্থায়ী

ক্যাম্পাস এবং হাসপাতালের অবস্থান২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে কলেজটি মদনপুর এলাকায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয়। ৩৫ একর জমিতে নির্মিত এই ক্যাম্পাসে রয়েছে আধুনিক একাডেমিক ভবন, হোস্টেল, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের জন্য ভবন, খেলার মাঠ, লাইব্রেরি ও ল্যাব। ৮ তলা হাসপাতাল ভবনসহ মোট ২৯টি ভবনের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। যদিও অবকাঠামো প্রায় সম্পূর্ণ হলেও, এখনো হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়নি।শিক্ষক ও জনবল সংকটকলেজে মোট ৭৭টি পদের বিপরীতে মাত্র ৪৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। অধ্যাপক, সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপক পদে ঘাটতি আছে। অধিকাংশ শিক্ষক সিলেট থেকে নিয়মিত যাতায়াত করেন, কারণ তাঁদের জন্য এখনো আবাসনের ব্যবস্থা হয়নি। কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভাবও প্রকট। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ২১ জন কর্মী কাজ করছেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে।প্রশাসনের প্রতিক্রিয়াকলেজের অধ্যক্ষ মো. মুস্তাক আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক। আমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। আপাতত জেলা সদর হাসপাতালে সপ্তাহে ছয় দিন ক্লিনিক্যাল ক্লাসের ব্যবস্থা করছি। একটি বাস ইতিমধ্যেই বরাদ্দ পেয়েছি।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতাল চালু হলে সমস্যা সমাধান হবে।প্রকল্পের বর্তমান অগ্রগতি‘সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল’ প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কলেজ অংশের ৯২ শতাংশ এবং হাসপাতালের ৮৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক স্বাধীন কুমার দাস জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্যক্রম চালু করার আশা করা হচ্ছে।সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণসুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন শুধুমাত্র একাডেমিক সংকট নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের চিকিৎসকদের মানসম্পন্ন শিক্ষার দাবি। এই সমস্যা শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, বরং সার্বিক জনস্বাস্থ্যব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করছে। সময়মতো প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে, এই ক্ষোভ আরও বড় পরিসরে রূপ নিতে পারে।

সম্পর্কিত ট্যাগ :

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর