পাবনার ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) হঠাৎ ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে শ্রমিকদের মধ্যে। গত দুই দিনে এই এলাকা থেকে অন্তত ১৭৩ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই ইপিজেড এলাকার বিভিন্ন কারখানার কর্মী।ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পার্শ্ববর্তী লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা সেবায় দেখা দিয়েছে সংকট। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শয্যা সংকটের কারণে অনেক রোগীকে বারান্দায় রেখেই চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে হঠাৎ করেই ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে আসতে শুরু করেন। শুক্রবারের মধ্যেই ৬২ জন রোগী ভর্তি হন এবং এরপর শনিবার বিকেল পর্যন্ত আরও ৫১ জন ভর্তি হন। সবমিলিয়ে একসঙ্গে এত রোগী আসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চরম চাপের মধ্যে পড়ে।ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.

আলী এহসান জানিয়েছেন, রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই ইপিজেডের বিভিন্ন কারখানার কর্মী। তাঁর মতে, পানিবাহিত জীবাণুর সংক্রমণই এই ডায়রিয়ার মূল কারণ হতে পারে। তবে পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং ভর্তি থাকা রোগীদের যথাসম্ভব প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।এদিকে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও অন্তত ১০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন, যারা সবাই ঈশ্বরদী ইপিজেডে কর্মরত ছিলেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দুপুরে কারখানার সরবরাহকৃত পানি পান করার পর থেকেই তারা অসুস্থতা অনুভব করতে থাকেন। রাতে বমি, পেটব্যথা ও পাতলা পায়খানার উপসর্গ দেখা দিলে তারা হাসপাতালে ভর্তি হন।ডেনিম ভিনটেজ কারখানার কর্মী মমতাজ বেগম বলেন, "খাবার আমরা নিজে নিয়ে যাই, কিন্তু পানি খেয়েছি কারখানার ট্যাপ থেকে। মনে হচ্ছে, পানি থেকেই আমরা আক্রান্ত হয়েছি।" নাকানো ইন্টারন্যাশনাল বিডির কর্মী আমজাদ হোসেনও একই কথা জানান।স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে আরও জানা যায়, গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত ৫ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, তবে গুরুতর অবস্থায় থাকা দুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ৬৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ ও ৪৬ জন নারী।লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মঞ্জুরুল আলম জানান, “খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে এত রোগী আসায় চিকিৎসা ব্যবস্থায় চাপে পড়েছি। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। রোগীদের উপসর্গ একরকম—পেটব্যথা, বমি ও ডায়রিয়া—যা পানিবাহিত ব্যাকটেরিয়া থেকে হতে পারে।”ঈশ্বরদী ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক এ বি এম শহিদুল ইসলাম জানান, গত দুই দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত বেশ কয়েকজন কর্মীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে ইপিজেডের ২৪টি কারখানার পানি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি কারখানাকে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও জানান, হঠাৎ এই ডায়রিয়ার উৎস চিহ্নিত করতে তদন্ত চলছে এবং পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো সক্রিয় রয়েছে।