ফরিদপুরের নগরকান্দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক বৈশাখী ইসলামের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে নগরকান্দার ভবুকদিয়া এলাকায় নিজ বাড়ির পাশেই হামলার শিকার হন বৈশাখী ইসলাম। ঘটনার ঘণ্টাখানেক পর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিনি নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে হামলার বিস্তারিত বর্ণনা দেন।ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন,“আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি একটি ইভটিজিংয়ের ঘটনার প্রতিবাদ করায় বিএনপির লোকজন রাস্তায় ফেলে আমাকে নির্মমভাবে মারধর করেছে। তারা চুল ধরে টেনে মেরেছে, লাথি মেরেছে, এমনকি আমার বাবাকেও খুঁজছে। আমি এখন খুব ভয়াবহ মানসিক অবস্থায় আছি।”ঘটনার পরপরই নগরকান্দা থানার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান, সঙ্গে যান ফরিদপুর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্য নেতারাও। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালালে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সংঘর্ষে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদেরও হামলার শিকার হতে হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে অভিযুক্তদের থানায় নিয়ে যায়।পুলিশ সদস্য আহত, গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগহামলায় নগরকান্দা থানা পুলিশের গাড়িচালক আবদুল হান্নান শরীফ (৫৬) আহত হন। তিনি বলেন,“আমরা অভিযুক্তদের ধরতে গেলে প্রায় দেড় শতাধিক লোক আমাদের ঘিরে ফেলে। তারা আমার মাথা ও হাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নেয় এবং পর্দাও ছিঁড়ে ফেলে।”বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধরাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ভবুকদিয়া এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর
্মীরা। এতে বেশ কিছুক্ষণ যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।গ্রেপ্তার ও মামলাপুলিশের অভিযানে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে, যাদের একজন হলেন শরীফ ব্যাপারী (২১), ভবুকদিয়া গ্রামের জালাল ব্যাপারীর ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে।আইনগত পদক্ষেপের আশ্বাস প্রশাসনেরনগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সফর আলী বলেন,“ঘটনায় পুলিশের একজন সদস্য আহত হয়েছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”তিনটি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) আসিফ ইকবাল। তিনি জানান—১. বৈশাখী ইসলামের ওপর হামলার ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা,২. বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় আরেকটি মামলা,৩. পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা করা হবে।বিবৃতি ও প্রতিবাদবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র কাজী জেবা তাহসিন এক বিবৃতিতে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। বিবৃতিতে বলা হয়,“একজন বিএনপি প্রার্থী ও তাঁর ছেলে প্রকাশ্য দিবালোকে বৈশাখীকে চুল ধরে টেনে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন।”আন্দোলনের ফরিদপুর জেলা আহ্বায়ক কাজী রিয়াজ বলেন,“আমরা নিজেরাই পুলিশের ওপর হামলা প্রতিহত করেছি। আমাদের দিকেও হামলা চালানো হয়েছে।”বিএনপি পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকারস্থানীয় বিএনপি নেতারা এই ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন।নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান মোল্লা বলেন,“এই ঘটনায় দুই পরিবারের কেউই বিএনপি ঘরানার নয়। বরং দু’পক্ষই আওয়ামী লীগের সমর্থক। এখানে বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।”
মন্তব্য (০)