জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপি স্পষ্ট অবস্থান উপস্থাপন করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে একটি তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেয় এবং ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের জন্য একটি স্পষ্ট 'রোডম্যাপ' প্রদানের আহ্বান জানান।গতকাল সোমবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে কমিশনের প্রধান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আলোচনা শুরু হয়। প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি সহ ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়।বিএনপি’র বক্তব্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগবৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমরা দ্বিতীয়বারের মতো আলোচনায় এসেছি, ভবিষ্যতে আর ডাক পাব কি না জানি না। কিন্তু কমিশনের অগ্রগতি আমাদের আশ্বস্ত করতে পারেনি।” তিনি উল্লেখ করেন যে, বিএনপি ছিল সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রথম প্রবক্তা, কিন্তু তাদের প্রস্তাবনাগুলোর প্রতি কমিশনের দৃষ্টিভঙ্গি হতাশাজনক।“আপনাদের অনেক সংস্কার প্রস্তাব আমাদের ৩১ দফার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, তবে আপনি আরও অনেক নতুন বিষয় তুলে ধরেছেন। আমরা এ নিয়ে তিন দিন টানা আলোচনা করেছি। কিন্তু সংক্ষিপ্ত ভার্সনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে,”— বলেন সালাহউদ্দিন।নির্বাচন নিয়ে সময়সীম

া নির্ধারণের আহ্বানতিনি জোর দিয়ে বলেন, “ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন না করার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। আমরা আগেই যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিয়েছি কেন এই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন জরুরি। জাতির মধ্যে ষড়যন্ত্রের সুযোগ নিচ্ছে কেউ কেউ। একপক্ষ অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, যার উৎস অভ্যন্তরীণ এবং কিছুটা বৈদেশিকও।”“পার্শ্ববর্তী একটি দেশ যদি বলে নির্বাচন এখনই দরকার নেই, তা বলে কি আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার স্থগিত রাখব? ইউরোপ-আমেরিকা যখন নির্বাচন চায়, তখন তো আপনারা কিছু বলেন না।”— এভাবেই নির্বাচনের সময় নিয়ে দ্বৈতনীতি নিয়েও সমালোচনা করেন তিনি।প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্যে বিএনপির অসন্তোষসালাহউদ্দিন আহমদ প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে ‘একটি মাত্র দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়’—এই মন্তব্যকে আহত করার মতো বলে আখ্যায়িত করেন। “ক্ষমা করবেন, এই বক্তব্য আমাদের খুব কষ্ট দিয়েছে,” তিনি বলেন।“এই দেশের মানুষ চায় উপদেষ্টামণ্ডলী হোক নিরপেক্ষ। আমরা অভিযোগ জানিয়ে আপনাদের হাতে শক্তি তুলে দিচ্ছি, দুর্বল করার জন্য নয়। তাই সবদিক বিবেচনায় ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিন।” বিএনপির দাবি স্পষ্ট—গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অপরিহার্য। জাতীয় ঐকমত্য গঠনের এই উদ্যোগ যেন সময়ক্ষেপণের শিকার না হয়, সে বিষয়ে দলটি গভীরভাবে সতর্ক।