উৎপাদন ব্যয়ের দ্বিগুণে চাল, তিনগুণে আলু, সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজনিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো সরবরাহ ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ও অতিমুনাফার প্রবণতা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে, চাল, আলু, পেঁয়াজ, ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম বৃদ্ধির পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে একাধিক হাত বদল, অদক্ষ মজুত ব্যবস্থা এবং পণ্যের মৌসুম অনুযায়ী আমদানি ও সরবরাহ ঘাটতি।জরিপ অনুযায়ী, একজন কৃষকের উৎপাদন করা চাল পাঁচ থেকে ছয় হাত ঘুরে বাজারে পৌঁছায়, ফলে এক কেজি মোটা চালের উৎপাদন ব্যয় ৩৪ টাকা হলেও, খুচরা বাজারে তা বিক্রি হয় ৬২-৬৩ টাকায়। চালের মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে ধান চাষের জমি কমে যাওয়া, বন্যা, পোকার আক্রমণ, ডলার সংকট ও চাষাবাদের খরচ বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করা হয়েছে।আলু ও হিমাগার সংশ্লিষ্ট জটিলতা২০২৩ সালে দেশে ১ কোটি ৬ লাখ টন আলু উৎপাদন হলেও, চাহিদার সঙ্গে তথ্যের গরমিল এবং হিমাগারে মজুত থাকা আলুর পর্যায়ক্রমিক ছাড় না হওয়ায় বাজারে বড় মূল্যবৃদ্ধি হয়। ১৭ টাকায় উৎপাদিত আলু খুচরায় বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৯০ টাকায়, যার পেছনে হিমাগার ছাড়ের সময় অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন বড় ভূমিকা রাখে।পেঁয়াজে চরম অসঙ্গতি, কৃষকের লোকসানপেঁয়াজের বাজারে ২
০২৩ সালের ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ মূল্য দাঁড়ায় ২৫০ টাকা প্রতি কেজি। অতিবৃষ্টি, বন্যা এবং মজুতদারদের কারণে সরবরাহ সংকট দেখা দেয়। চলতি বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যয় ৫৪ টাকা হলেও কৃষক তা বিক্রি করেছেন ৩৫–৪৮ টাকায়, ফলে ২৪ শতাংশ পর্যন্ত লোকসান হয়েছে তাঁদের। গত বছরের অতিমুনাফা চাষিদের বেশি চাষে উৎসাহিত করে, যার ফলেই এবার অতিরিক্ত সরবরাহে দাম পড়ে গেছে।ডিম ও ব্রয়লারের বাজারে খাদ্য খরচের চাপডিম ও ব্রয়লার মুরগির উৎপাদনে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ হয়ে যায় খাদ্যের পেছনে, যার বেশিরভাগই আমদানিনির্ভর। গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের পোলট্রি খাতেও সংকট দেখা দেয়। এতে অনেক ছোট খামার বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সহজ শর্তে ঋণ এবং খাদ্য ও বাচ্চার দাম কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাবনা:অমৌসুমি সময়ে আমদানিতে শুল্ক হ্রাসসঠিক উৎপাদন ও চাহিদার তথ্য সংরক্ষণহিমাগার থেকে ধাপে ধাপে আলু ছাড়পোলট্রি খাতের জন্য সহজ শর্তে ঋণমধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণে কঠোর তদারকিএই জরিপ থেকে স্পষ্ট, কৃষকরা যেখানে লোকসানের মুখে, সেখানে মধ্যস্বত্বভোগীরা অতি মুনাফা করে চলেছে। সরবরাহ চেইন ও নীতিগত সংস্কার ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব নয়।
মন্তব্য (০)