দক্ষিণ এশিয়ায় আন্তবাণিজ্য কতটা কম?বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য অনেকটাই পিছিয়ে।সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আন্তবাণিজ্য মোট বাণিজ্যের মাত্র ৬%।ইউরোপীয় ইউনিয়নে এই হার ৬৮%, আসিয়ানে ২৭%, নাফটায় ৪০%+। প্রধান বাধাগুলো কী?বিশ্লেষকরা দক্ষিণ এশিয়ার দুর্বল বাণিজ্যের পেছনে চিহ্নিত করেছেন কয়েকটি মূল সমস্যা:উচ্চ শুল্ক ও অশুল্ক বাধাদুর্বল অবকাঠামো (বন্দর, সড়ক, রেল)উচ্চ লজিস্টিক খরচরাজনৈতিক আস্থাহীনতা ও অবিশ্বাসবিশ্ব ব্যাংকের এক বিশ্লেষণে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার একটি কোম্পানির তুলনায় ভারতীয় কোম্পানির পক্ষে ব্রাজিলের সঙ্গে বাণিজ্য করা ২০% বেশি সাশ্রয়ী। ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের প্রভাবদুই দেশের মধ্যকার যুদ্ধাবস্থার পরিবেশে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য কার্যত বন্ধ।এই উত্তেজনা গোটা অঞ্চলের বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের সমস্যাগুলো কী?বাংলাদেশ থেকে ভারতের আমদানিতে নানা বিধিনিষেধ আরোপ।ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য:২০২৩–২৪ অর্থবছরে সার্কে রপ্তানি: ১৭৪.৩৮ কোটি ডলারএকই সময়ে সার্ক থেকে আমদানি: ৯৭৬.২৫ কোটি ডলারসার্কে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি: মাত্র ৪.
৪৭%সার্ক থেকে মোট আমদানি: ১৫.৪৪% সার্ক, বিমসটেক—সবই অকার্যকর?সার্ক কার্যত অকার্যকর হয়ে গেছে; সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৬ সালে।বিমসটেক প্রতিষ্ঠা ১৯৯৭ সালে হলেও ২০০৪ সালের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) এখনো কার্যকর হয়নি।সাফটা, সাপটা, বিবিএন—এগুলোও প্রত্যাশিত সুফল দিতে পারেনি। সমাধানের পথ কী হতে পারে?বিশ্লেষকদের পরামর্শ:বিনিয়োগ উপযোগী অবকাঠামো তৈরি (সড়ক, রেল, বন্দর)একক কাস্টমস ও সনদ ব্যবস্থা চালুরাজনৈতিক সদিচ্ছা ও কূটনৈতিক সংলাপযৌথ অর্থনৈতিক অঞ্চল/শিল্প পার্ক তৈরিদ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য জোরদার করাবিকল্প বাজার খোঁজা (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা)পণ্যের গুণগত মান ও প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ানো সেলিম রায়হানের পর্যবেক্ষণ:রাজনৈতিক জটিলতা দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্যের মূল বাধা।আঞ্চলিক সমন্বয়ের পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।রপ্তানির বিকল্প বাজার খুঁজে নিতে হবে।দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক বৈরিতা এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতা আন্তবাণিজ্যের প্রধান প্রতিবন্ধক। সার্ক ও বিমসটেকের মতো আঞ্চলিক উদ্যোগগুলো কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশসহ অঞ্চলটির দেশগুলোর উচিত এখন বাস্তবসম্মত কৌশল গ্রহণ করে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানো এবং নতুন রপ্তানি বাজারের খোঁজে উদ্যোগ নেওয়া।
মন্তব্য (০)