ঢাকার আগারগাঁওয়ে চলছে মাসব্যাপী জাতীয় বৃক্ষমেলা, যেখানে দেশি-বিদেশি ফুল, ফল, ঔষধি ও শোভাবর্ধক গাছ নিয়ে জমে উঠেছে প্রাণের মিলনমেলা। প্রতিবছর ৫ জুন পরিবেশ দিবস উপলক্ষে মেলা শুরু হলেও এবছর ঈদের কারণে ২৫ জুন শুরু হওয়া এই মেলা চলবে ২৪ জুলাই পর্যন্ত।প্রবেশে নেই কোনো টিকিট, সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত এই মেলায় গাছ কেনার পাশাপাশি চোখ জুড়ানো সবুজের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগও মিলছে। তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে ফলের গাছগুলোর দাম। একই প্রজাতির গাছ, তবে আকার, উচ্চতা, ফল বা ফুলের উপস্থিতি, টব-বস্তা-ড্রাম—এসবের উপর ভিত্তি করে দাম কোথাও দুই-তিনশো টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে লাখ টাকায়।চলুন জেনে নিই কিছু জনপ্রিয় ফলজ গাছের বর্তমান বাজারদর—আম: দেশ নয়, বিদেশি রাজত্বে রঙিন রাজাবর্তমানে দেশি আমের মৌসুম শেষ, তাই থাই ব্যানানা, রেড পালমার, সূর্যডিম (মিয়াজাকি), মহাচানক, কিং অব চাকপাত–এর মতো নজরকাড়া ভিনদেশি আম দাপটের সঙ্গে স্থান দখল করে নিয়েছে। ড্রামে বসানো এসব আম গাছের দাম ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে। আর যদি ছোট চারা চান, তা মিলবে মাত্র ২০০ টাকার কাছাকাছি থেকে শুরু করে।জাম: সাদা-কালোতে থাই জাম্বুর জয়জয়কারগত কয়েক বছর ধরে জামের বৈচিত্র্য ও জনপ্রিয়তা চোখে পড়ার মতো। থাই জাম্বু জাম, যার একেকটি ফল আমড়ার মতো আকারের, সেই গাছের দাম ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। রোমন নার্সারিতে এই জাম গাছের দাম হাঁকা হচ্ছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা! ছোট চারার দামও কম নয়—১২০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে।কাঁঠাল: বারোমাসি ও পিংক জাতের কদরগাছে ঝুলছে আসল কাঁঠাল! ছোট ড্রামে বসানো গাছে ফল ধরেছে, তার ভারে যেন গাছ ভেঙে না পড়ে, তাই গুলোকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। থাই কাঁঠাল, থাই পিংক কাঁঠাল ও ভিয়েতনামের বারোমাসি কাঁঠালের দাম পড়ছে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। ছোট চারা পেতে পারেন ৩০০–৫০০ টাকায়, যা ছাদে চাষের জন্য আদর্শ।জামরুল: রঙিন সৌন্
দর্যে জাভা আপেললাল, সাদাটে সবুজ, লালচে খয়েরি ও কমলা রঙের জামরুল গাছ মেলাজুড়ে নজর কেড়েছে। ফলহীন ছোট চারা ১৫০–২০০ টাকায় মিললেও, ফলসহ গাছের দাম পৌঁছেছে ২৫ হাজার টাকায়। মহুয়া নার্সারির একটি ফলসহ ছোট আকারের গাছটি দেখতে অনেকটা বনসাইয়ের মতো।আমলকী: দেশি-থাই দুই জাতেরই কদরসবুজ পাতার দেশি আমলকী যেমন আছে, তেমনি লালচে পাতার থাই আমলকীও নজর কাড়ছে। ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায় মিলছে ফলসহ থাই আমলকী গাছ, তবে কম দামে একই জাতের ছোট গাছও সহজলভ্য।অ্যাভোকাডো: ছোট গাছে চোখ ধাঁধানো ফলভিনদেশি ফল হলেও এখন দেশেই চাষ হচ্ছে অ্যাভোকাডো। ছোট চারা মাত্র কয়েকশ টাকায় পাওয়া গেলেও, দুই ফুট উচ্চতার এক গাছে একটি মাত্র ফল ধরায় তার দাম ২৫ হাজার টাকা! বরিশাল নার্সারিতে ড্রামে বসানো বনসাইসদৃশ অ্যাভোকাডো গাছের দাম ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, গাছে ঝুলছে একাধিক চকচকে সবুজ ফল।নারিকেল: লম্বায় যেমন, দামে তেমন৫০০ টাকার নিচে নারিকেল গাছের চারা পাওয়া দুষ্কর। দেশি-বিদেশি জাতভেদে দাম আরও বেড়ে দাঁড়ায় কয়েক হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। উইনার নার্সারিতে ২০ ফুট উচ্চতার নারিকেল গাছের দামই সবচেয়ে বেশি।সফেদা: দেশি-থাই এবং বিরল মাম্মী জাতগোল দেশি সফেদার চারা পাওয়া যায় কয়েকশ টাকায়। তবে থাই সফেদা, যেটা লম্বাটে ও আকর্ষণীয়, তার দাম ৮ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। মা-মনি নার্সারিতে বিক্রি হচ্ছে বিরল ‘মাম্মী সফেদা’, যার দাম ৮০ হাজার টাকা, এটি একমাত্র বীজবিশিষ্ট বৃহৎ আকৃতির সফেদা।খেজুর: ফলসহ বিদেশি প্রজাতির চাহিদা বেশি ফলের গুচ্ছ নিয়ে নজর কেড়েছে তিন ধরনের খেজুর গাছ। ডিসি নার্সারির ‘মেডজুল’ খেজুর গাছের দাম ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, আর ব্র্যাক নার্সারির ‘সুকারি’ জাতের গাছটি মিলছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায়। দাম শুনে দর্শনার্থীরা হতভম্ব হলেও, ফলসহ গাছ দেখে মুগ্ধ হয়ে অনেকে গাছের পাশে দাঁড়িয়ে ছবিও তুলছেন স্মৃতি হিসেবে।
মন্তব্য (০)