ব্রেকিং নিউজ :

দৃষ্টিকোণ নিউজ একটি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, যা সর্বশেষ সংবাদ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।

আমরা দেশের ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ খবর, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করি।

অন্যান্য--

নেলসন ম্যান্ডেলার শপথ: অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের জয়

নেলসন ম্যান্ডেলার শপথ: অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের জয় Image সংগৃহীত | ছবি: ফাইল ছবি
ইমেইল :

“প্রতিশোধ নিলে, আমরা কীভাবে ওদের চেয়ে ভালো হলাম?” — ইতিহাসে অমর এই কথাটি বলেছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা।“চলুন, সবার জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করি। সবার জন্য শান্তি বজায় রাখি। এই সুন্দর ভূমি আর কখনোই একে অন্যের দ্বারা নিপীড়নের মুখোমুখি হবে না।”১৯৯৪ সালের ১০ মে, এই কথাগুলো উচ্চারিত হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যান্ডেলার শপথ অনুষ্ঠানে। রাজধানী প্রিটোরিয়ার ইউনিয়ন ভবনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ১৪০টির বেশি দেশের প্রতিনিধি। এটি শুধু একটি শপথ ছিল না, ছিল বর্ণবাদের বিরুদ্ধে শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজয়ের প্রতীক।২৭ বছরের কারাবাসের পর বিজয়ের দিননেলসন ম্যান্ডেলা, যিনি আজ 'মাদিবা' নামে পরিচিত, দীর্ঘ ২৭ বছর কারাবন্দি ছিলেন শুধুমাত্র বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার কারণে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৪৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা ন্যাশনাল পার্টি শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদে বিশ্বাসী ছিল। তারা চালু করেছিল নির্মম বর্ণবাদ আইন, যেখানে কালো মানুষদের মৌলিক অধিকারও হরণ করা হতো।এই অমানবিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন শুরু করেন ম্যান্ডেলা ও তাঁর দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (ANC)। সেই সংগ্রামের ফলেই আসে ১৯৯৪ সালের ২৭ এপ্রিলের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন, যেখানে ANC ২৫২টি আসনে জয় পেয়ে ম্যান্ডেলাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে।‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন’: ঘৃণার জবাবে ক্ষমারাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে বসে প্রতিশোধ নয়, ক্ষমা ও মিলনের বার্তা দিয়েছিলেন ম্যান্ডেলা। তাঁর গঠিত ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন’ তদন্ত করে ১৯৬০ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত বর্ণবাদী শাসনের নানা অপরাধ। এটি বিশ্বের ইতিহাসে নৃশংসতা

থেকে শান্তির পথে উত্তরণের উজ্জ্বল উদাহরণ।শার্পভিল হত্যাকাণ্ড: আন্দোলনের মোড় ঘোরানো ঘটনা১৯৬০ সালের ২১ মার্চ, দক্ষিণ আফ্রিকার শার্পভিল এলাকায় বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে গুলি চালিয়ে ৬৯ জন কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যা করে পুলিশ। ইতিহাসে এটি ‘শার্পভিল হত্যাকাণ্ড’ নামে পরিচিত। এরপর থেকেই বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন আরও তীব্র হয়। ম্যান্ডেলাকে আটক ও পরে নিষিদ্ধ করা হয়।রিভোনিয়া মামলা ও রোবেন দ্বীপের ১৮ বছর১৯৬৪ সালের রিভোনিয়া মামলায় নাশকতার অভিযোগে ম্যান্ডেলাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। শুরু হয় তাঁর বিখ্যাত রোবেন দ্বীপের জেলজীবন। এরপর ১৯৮২ সালে তাঁকে কেপটাউনের পোলসমুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।স্বাধীনতা, কিন্তু শর্তসাপেক্ষ নয়দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার তাঁকে মুক্তি দিতে চাইলেও শর্ত ছিল—রাজনীতি ছাড়তে হবে। কিন্তু ম্যান্ডেলা দৃঢ়ভাবে বলেন, "আমার জনগণ মুক্ত না হলে, আমি মুক্ত হতে চাই না।" এই অবিচল মনোভাব বিশ্বজুড়ে তাঁর প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থন বাড়িয়ে তোলে।অবশেষে, ১৯৯০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, প্রেসিডেন্ট এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্ক বর্ণবাদী শাসনের অবসানের ঘোষণা দেন। আর ১১ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান ম্যান্ডেলা।মুক্তির পর প্রথম ভাষণেই গণতন্ত্রের ডাকসেদিন সন্ধ্যায় কেপটাউনের টাউন হলের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ম্যান্ডেলা বলেন:“আমরা স্বপ্ন দেখছি একটি গণতান্ত্রিক সমাজের, যেখানে সম–অধিকার নিয়ে সবাই বাস করবে। বর্ণবাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।”নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন শুধু একজন নেতা নন, ছিলেন ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের প্রতীক। তাঁর সংগ্রাম দেখিয়ে দিয়েছে, ক্ষমার মধ্যে লুকিয়ে থাকে সবচেয়ে বড় শক্তি। তাঁর দেখানো পথ শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য নয়, আজও সারা বিশ্বের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা।

সম্পর্কিত ট্যাগ :

মন্তব্য (০)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে *

সম্পর্কিত খবর