যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা প্রশাসনে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, ইরান ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের মতপার্থক্যের কারণে। মার্কিন গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, এই বিরোধ কেবল মতবিরোধ নয়, বরং প্রশাসনের অভ্যন্তরে একটি স্পষ্ট বিভাজনের চিত্র তুলে ধরছে।জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের পদে তুলসীর বিতর্কিত আবির্ভাব২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের পর ট্রাম্প ৪৩ বছর বয়সী সাবেক সেনাসদস্য তুলসী গ্যাবার্ডকে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক পদে নিয়োগ দেন। যদিও তাঁর গোয়েন্দা খাতে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ছিল না, তবে দীর্ঘ দুই দশক মার্কিন সেনাবাহিনীতে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন তুলসী।ইরান নিয়ে ট্রাম্পের বিপরীতমুখী অবস্থানতুলসী গ্যাবার্ড বারবার মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। কংগ্রেসে দেওয়া এক সাক্ষ্যে তিনি বলেন, “গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না।” অথচ ট্রাম্প দাবি করেন, “তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির একেবারে কাছাকাছি।”এই প্রকাশ্য মতভেদের পরপরই ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “সে (তুলসী) কী বলেছে, তাতে আমার কিছু যায় আসে না।” এতে করে প্রশ্ন উঠেছে, তুলসী কি এখন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রবিন্দু থেকে ছিটকে পড়েছেন?ক্যাম্প ডেভিড বৈঠক থেকেও বাদ পড়েছেন তুলসী৮ জুন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের ক্যাম্প ডেভিডে ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক অন
ুষ্ঠিত হয়। তবে সেখানে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবেও উপস্থিত ছিলেন না তুলসী গ্যাবার্ড। এতে করে প্রশাসনে তাঁর অবস্থান নিয়ে নতুন করে সংশয় তৈরি হয়েছে।হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র অবশ্য দাবি করেন, “তুলসী তখন ন্যাশনাল গার্ডের পূর্বনির্ধারিত প্রশিক্ষণে ছিলেন, তাই বৈঠকে উপস্থিত হতে পারেননি।”মেগা জোটেও বিভাজনের ইঙ্গিতট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ (মেগা) জোটের মধ্যেও ইরান ইস্যুতে মতানৈক্য স্পষ্ট। একটি অংশ ইসরায়েলের যেকোনো সামরিক পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সমর্থনের পক্ষে থাকলেও, অন্য অংশ এটিকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির পরিপন্থী বলে মনে করছে। তুলসী গ্যাবার্ড এই দ্বিতীয় পক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা।সমর্থন ও সমালোচনার মাঝামাঝি অবস্থানতুলসীর সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, যিনি বলেছেন, “তুলসী একজন দেশপ্রেমিক ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশ্বস্ত সহযোগী। জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।”অন্যদিকে কিছু রিপাবলিকান নেতারা তুলসীর সাম্প্রতিক মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন। লুইজিয়ানার সিনেটর জন কেনেডি এক বিবৃতিতে তুলসীকে কটাক্ষ করে মন্তব্য দেন, যা তাঁর অবস্থানকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।গোপনে কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে তুলসী ট্রাম্প প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তুলসী দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের বিরোধিতা করে আসছেন। তিনি প্রকাশ্যে এ বিষয়ে মতপ্রকাশ না করলেও, অভ্যন্তরীণভাবে কূটনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজে পেতে সচেষ্ট।
মন্তব্য (০)