মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল সম্প্রসারণ প্রকল্পে দর–কষাকষির মাধ্যমে ব্যয় কমেছে প্রায় ১৮৬ কোটি টাকা, যা প্রস্তাবিত দামের তুলনায় প্রায় ২৯ শতাংশ কম। সংশোধিত ৪৬৫ কোটি টাকার প্রস্তাব বর্তমানে সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।এই অংশে রেললাইন, বৈদ্যুতিক ও সংকেতব্যবস্থা স্থাপনসহ অন্যান্য কাজ বাস্তবায়নে ঠিকাদার নিয়োগ পেলেও মেট্রোরেল চলাচল শুরুর জন্য দেড় বছর সময় লাগবে। যদিও প্রকল্প হাতে নেওয়ার সময় বলা হয়েছিল ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে মেট্রোরেল চালু হবে।ঢাকায় মেট্রোরেল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্র জানায়, মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১.১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ রুটে উড়ালপথ ও স্টেশন নির্মাণকাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে রেললাইন, বিদ্যুৎ, সংকেত ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত কাজ সম্পন্ন না হলে ট্রেন চলাচল শুরু সম্ভব নয়।বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.
১ কিলোমিটার পথে মেট্রোরেল চলাচল করছে, যার যাত্রীসংখ্যা প্রতিদিন ৪ লাখের বেশি। কমলাপুর পর্যন্ত চালু হলে দৈনিক যাত্রীসংখ্যা বাড়বে প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজারে।দর–কষাকষির দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ব্যয় কমলোডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের জুলাইয়ে মারুবিনি করপোরেশন (জাপান) ও লারসন অ্যান্ড টুবরো (ভারত) প্রথম ৬৫১ কোটি টাকার দর প্রস্তাব দেয়। পরে কয়েক ধাপে দর কমিয়ে তারা ৬৩৪ কোটি টাকায় নামে।ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ফারুক আহমেদকে ডিএমটিসিএলের এমডি হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার, যিনি বিভিন্ন দেশে মেট্রোরেল নির্মাণে অভিজ্ঞ। তাঁর নেতৃত্বে দর–কষাকষির মাধ্যমে আবারো মূল্য পর্যালোচনা হয়।দীর্ঘ আলোচনার পর ১৬ জুন ঠিকাদার পক্ষ থেকে সর্বশেষ ৪৬৫ কোটি টাকার দর প্রস্তাব দেওয়া হয়, যা সরকারের মূল্যায়নের টেবিলে রয়েছে। অথচ শুরুতে এই কাজের জন্য বরাদ্দ ছিল মাত্র ২৭৪ কোটি টাকা।যেসব কাজ হবে এই বাজেটের আওতায়নতুন বাজেটের আওতায় যেসব কাজ করা হবে: রেললাইন বসানো প্ল্যাটফর্মের দরজার সঙ্গে সমন্বিত বাইরের দরজা স্থাপন সংকেতব্যবস্থা ও স্বয়ংক্রিয় ভাড়া আদায়ের প্রযুক্তি লিফট, এস্কেলেটর ও মনিটর বসানো স্টেশন ভবনের জন্য সাবস্টেশনসহ বিদ্যুৎ সংযোগ এ অংশের জন্য আলাদাভাবে নতুন কোচ কেনার প্রয়োজন হবে না, কারণ ইতোমধ্যে ২৪ সেট ট্রেন আমদানি করা হয়েছে।উড়ালপথ নির্মাণে থাই কোম্পানির নেতৃত্বকমলাপুর অংশে উড়ালপথ ও স্টেশন নির্মাণ করছে থাইল্যান্ডভিত্তিক ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি, সহযোগী হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশের ম্যাকডোনাল্ড স্টিল। চুক্তির মূল্য ৫১১ কোটি টাকা।মূলত ২০২৩ সালের মধ্যে এই নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ধীরগতির কারণে সময়সীমা বাড়িয়ে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ইতাল-থাই আগারগাঁও অংশেও কাজ করেছিল।একক দরদাতা নিয়ে প্রশ্নডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, রেললাইন, বৈদ্যুতিক ও সংকেত ব্যবস্থা স্থাপনে লারসন অ্যান্ড টুবরো একক দরদাতা হওয়ায় প্রাথমিকভাবে অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠে। যদিও অন্যান্য কাজে প্রতিযোগিতা থাকায় ব্যয় তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রণে এসেছে।বিশেষজ্ঞের মতামতবাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ সামছুল হক মনে করেন, ঠিকাদার প্রথমেই বাড়তি দর দিয়ে বাজেট বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। তাঁর মতে, নতুন এমডির অভিজ্ঞতা ও দক্ষ দর–কষাকষির কারণেই ১৮৬ কোটি টাকা কমানো সম্ভব হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি আশা করেন, চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রতিশ্রুত সেবা ও পণ্য আদায়ে কঠোর নজরদারি চালানো হবে।মেট্রোরেলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত পুরো রুটের নাম এমআরটি লাইন-৬। মোট দৈর্ঘ্য ২১.২৬ কিলোমিটার ও স্টেশন ১৭টি। প্রকল্পের প্রাথমিক অনুমোদন ছিল ২০১২ সালে, তখন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২১,৯৮৫ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩,৪৭২ কোটি টাকা। জাইকার কাছ থেকে ১৯,৭১৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য (০)