ইসরায়েলি হামলার পর ইরানে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তার কোনও যুদ্ধঘণ্টা নেই, নেই কোনও সাইরেনের শব্দ। কিন্তু তবুও এই যুদ্ধ প্রতিদিনই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সাধারণ মানুষকে। যুদ্ধে যারা যায়, শুধু তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না—এর ধাক্কা লাগে প্রতিটি নাগরিকের জীবনে, পরিবারে, আত্মায়।জীবনের প্রতিটি কোণায় আতঙ্কের ছায়াইসরায়েলি আগ্রাসনের পর থেকে ইরানে ইন্টারনেট, ফোন নেটওয়ার্ক বারবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আতঙ্কে অনেকেই রাজধানী তেহরান ছাড়ছেন।একজন ২৭ বছর বয়সী ইরানি সেনাসদস্য বলেছেন, “যেখানেই যাই, মনে হয় রকেট আমার পিছু নিয়েছে। এক জায়গা ছেড়ে আরেক জায়গায় গেলেও হামলা থেকে রেহাই নেই।” এমন বাস্তবতা নিয়েই জীবন কাটাচ্ছেন বহু ইরানি।পুঁজি শেষ, খাদ্য অনিশ্চিতইরানের বিভিন্ন শহরের ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থ তোলার জন্য মানুষের দীর্ঘ সারি। কিন্তু প্রত্যাশিত অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে অনেকেই ঋণ বা বাকির উপর নির্ভর করছেন। এক শিক্ষক জানিয়েছেন, নগরকেন্দ্রে এত ভিড় যে ব্যাংকের কর্মীরা কাজ সামলাতে পারছেন না।দোকানগুলোতে খাবার ও পানি মজুত প্রায় শেষ। যাদের হাতে সামান্য অর্থ আছে, তারা যা পাচ্ছেন, সেটুকুই কিনে নিচ্ছেন। অনেকেই বলছেন, “যুদ্ধ শুধু শারীরিক ক্ষতি নয়, মানসিকভাবেও আমরা ভেঙে পড়ছি।”ব্যবসায়ীদের অজানা ভবিষ্যৎতেহরানের বিখ্যাত আলাদ্দিন মলসহ অন্যান্য শপিং সেন্টারগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিক্রি নেই বললেই চলে। একজন দোকানদার
বলেন, “সারাদিন অপেক্ষায় থাকি, যদি অন্তত একটার মতো বিক্রি হয়।”ইরানে আগে থেকেই মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক চাপ ছিল। নতুন করে এই যুদ্ধ সেই সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকে ধার করে খাদ্য কিনে রাখছেন, ভবিষ্যতের শোধ নিয়ে তাদের মনেই নেই কোনও নিশ্চয়তা।আশ্রয়হীন আতঙ্কইরানে বোমা হামলা থেকে বাঁচার কোনও স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নেই। কর্তৃপক্ষ মেট্রো স্টেশন ও মসজিদকে সাময়িক আশ্রয়ের ঘোষণা দিলেও সেটাও যথেষ্ট নয়। ১৬ জুন সকালে দেখা গেছে, মেট্রো স্টেশন বন্ধ, আর স্টেশনের বাইরে উদ্বিগ্ন মানুষের ভিড়।একজন নারী বলেন, “প্রতিটি বিস্ফোরণে মনে হয়, আমার জীবনের অর্ধেকটা ঝরে যাচ্ছে।” তার বৃদ্ধ বাবাও ভয় গোপন করতে পারেন না।যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতাইন্টারনেট না থাকায় পরিবারে খবর দেওয়া, দুঃসময় ভাগাভাগি করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। একজন প্রবাসী জানান, তার বাড়ির কাছে হামলা হলেও, পরিবারের কোনও উত্তর না পাওয়ায় তিনি কয়েক ঘণ্টা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।রাজধানী ছাড়ছে সাধারণ মানুষবিবিসি জানিয়েছে, আতঙ্কে রাজধানী তেহরান ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন বহু মানুষ। কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ বাইকে বা গাড়িতে। তুরস্ক সীমান্তমুখী এলাকাগুলোতে মানুষ অপেক্ষা করছে। উড়োজাহাজ বন্ধ, তাই বাস বা গাড়িই একমাত্র ভরসা।শেষ কথা: যুদ্ধ থামলেও থামে না মানুষের ক্ষরণ রাজায় রাজায় যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, কিন্তু সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই থেকে যায়। মূল সংঘাত থেমে গেলেও তাদের জীবনে
মন্তব্য (০)